১. খুকি বেগমের স্বনির্ভর হওয়ার কাহিনী
খুকি বেগম ঝিনাইগাতী উপজেলার দক্ষিণ ঝিনাইগাতী গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে একই গ্রামের নুরুল ইসলামের সাথে তার বিয়ে হয়। স্বামীর জমি-জমা নেই বললেই চলে। নূরুল ইসলাম দর্জি কাজের পাশাপাশি দিন মজুর হিসেবেও কাজ করেন। তার স্বল্প আয়ে দু’বেলা দুমুঠো পেটের ভাত জুটানো দুরুহ ছিল। দিন যেতে থাকে। সংসারে আসে ৩টি সন্তান। বাড়তে থাকে অভাব-অনটন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে তিনি যখন জর্জরিত, ঠিক তখনই ২০১২ সনে একদিন পল্লী প্রগতি প্রকল্পের মাঠ সংগঠক চিনু রানী রায় এর সাথে তার পরিচয় হয়। তার দুঃখের কাহিনী শুনে চিনু রানী তাকে প্রকল্পের সদস্য হতে পরামর্শ দেন। পরামর্শ মতে ২০১২ সনে ঝিনাইগাতী দক্ষিণ মহিলা দলের সদস্য হন এবং ঐ বৎসরেই ক্ষুদ্র ব্যবসা খাতে ৭০০০/- টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ টাকার কিছু অংশ দিয়ে তিনি ছিট কাপড় কিনে তার দোকানে বিনিয়োগ করেন এবং বাকী টাকা দিয়ে হাঁস মুরগী কিনে তা পালন করতে থাকেন। হাঁস মুরগীর ও ডিমের বিক্রিত টাকা দিয়ে তিনি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ ও সঞ্চয় করেন। ব্যবসার আয় দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসার চালান। তিনি সম্পুর্ণ ঋণ পরিশোধ করে ৩য় দফায় ২০১৫ সালে আবার ১১,০০০/- টাকা ঋণ গ্রহণ করেন যা দিয়ে তিনি একটি বকনা গাভী ক্রয় করেছেন। বর্তমানে তার ২টি গরু ও ১টি ছাগল আছে যা দিয়ে তিনি ভবিষ্যতে খামার করার স্বপ্ন দেখেছেন। তাঁর সন্তানেরা সবাই বিভিন্ন লেখাপড়া করছে। বর্তমানে তার সংসারে অনেকটাই স্বচ্ছলতা এসেছে। তিনি উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছেন।
কথাগুলি বলতে বলতেই তার চোখে অশ্রু নেমে এলো। আর এ অশ্রুই ভবিষ্যতে বিত্তহীন থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্নে বিভোর করেছে তাকে। ইতোমধ্যে তিনি বাড়ীতে উন্নত স্যানিটেশনের ব্যবস্থাসহ বাড়ীর অবকাঠামো অনেক সুন্দর করেছেন। তাঁর এ সাফল্যের জন্য তিনি বিআরডিবি’র নিকট কৃতজ্ঞ। বিআরডিবি’র মাধ্যমে তার মত অসহায় পরিবারের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটুক তিনি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
২. বিআরডিবি’র ক্ষুদ্র ঋণ বদলে দিয়েছে আজিজুলের জীবন
মোঃ আজিজুল মোড়ল খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার বাসিন্দা। বাবার আর্থিক সমস্যার কারনে তিনি ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পিতা-মাতা,স্ত্রী, ছোট ভাইবোন ও দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। দৈনিক প্রচুর পরিশ্রম করা সত্বেও তার আয় দ্বারা পরিবারের সদস্যদের ভরনপোষণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। ঋণ করে ছোট বোনকে বিয়ে দেওয়ার পর তার সমস্যা আরও বাড়ল এবং তিনি হতাশ হয়ে পড়লেন।
ঠিক ঐ সময় তিনি জানতে পারেন বিআরডিবি’র ক্ষুদ্র ঋণের কথা। তিনি ২০০১ সালে বিআরডিবি’র অধীনস্থ কৃষক সমবায় সমিতির সদস্য হন এবং ঐ বছর সমিতির সদস্যদের সাথে ১ম বারের মত ৭,০০০/- টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি একখন্ড জমি ইজারা নিয়ে পান চাষ শুরু করেন। পান বিক্রি করে তিনি ৩০,০০০/- আয় করেন। ঋণ পরিশোধ করে পূনরায় ১৫,০০০/- ঋণ গ্রহণ করেন। তিনি পান ও সবজী বিক্রি করে উক্ত ঋণের টাকা পরিশোধ করে পরবর্তী বছর ২০,০০০/- টাকা ঋণ নেন এবং ঐ জমির পাশে আরও একখন্ড জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করেন। ঐ বছর তিনি ঋণের টাকা পরিশোধ করে ৪০,০০০/- টাকা আয় করেন। একদিন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা তার পানক্ষেত দেখতে যান এবং তিনি খুশি হয়ে এর পাশাপাশি মাছ চাষের পরামর্শ দেন। অবশেষে তিনি আবারও ৩০,০০০/- ঋণ গ্রহন করেন এবং তার জমানো টাকা থেকে পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী মাছ চাষ শুরু করেন। সে বছর তিনি মাছ বিক্রি করে ২৫,০০০/-টাকা, পান বিক্রি করে ৩০,০০০/- টাকা এবং সবজি বিক্রি করে ২০,০০০/- টাকা করে মোট ৭৫,০০০/- টাকা লাভ করেন। এভাবে তিনি ধীরে ধীরে আয় ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে নিজের নামে ৮ একর জমি ক্রয় করেন। বর্তমানে আজিজুল মোড়ল কাচা ঘরের পরিবর্তে পাকা ঘরে বাস করছেন। তার মেয়েকে ভাল ঘরে বিয়ে দিয়েছেন, ছেলে ৯ম শ্রেনীতে পড়ছে। বর্তমেেন তিনি ৪ টি পুকুর ও ২টি পান ক্ষেতের মালিক এবং একজন সফল ও স্বচ্ছল সদস্য। তিনি মহান আল্লাহর কাছে বিআরডিবি’র ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
৩. দারিদ্র্য জয়ী নাছিমা বেগম
নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার বাসিন্দা নাছিমা বেগম। তার স্বামী একজন সামান্য দোকানের কর্মচারী। শ্বশুর-শ্বাশুরীসহ ৪ জনের সংসারে তিনি স্বামীর অল্প আয়ে দারিদ্র্যর করাল গ্রাসে বন্দী হয়ে কোন রকম দিনাতিপাত করতেন। অভাব যেন তাদের নিত্য সঙ্গি। স্বামীর পাশাপাশি আয় রোজগার করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্ন নাছিমা বেগমের বহুদিনের। কিন্তু এ জন্য প্রয়োজন অর্থের। কোথায় পাবেন তিনি অর্থ? এমনি যখন আবস্থা তখন একদিন তিনি পরিচিত হন বিআরডিবি’র মহিলা উন্নয়ন অনুবিভাগ (মউ) এর মাঠ সংগঠক প্রণীতা রাণী দত্তের সঙ্গে। মাঠ সংগঠকের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৯৮ সালে নাছিমা ২০ জন সদস্য নিয়ে মধ্য পলাশ মহিলা সমবায় সমিতি গঠন করেন এবং তিনি দলের ম্যানেজার নির্বাচিত হন। এরপর বিআরডিবি হতে দর্জি বিদ্যার উপর তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। তিনি ঐ বছর বিআরডিবি’র “মউ” হতে প্রথমে ৫০০০/- টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ঋণের অর্থ দিয়ে তিনি একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। সেলাই কাজ করে তিনি নিয়মিত সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করেন এবং শেয়ার-সঞ্চয় জমা করেন। পরবর্তীতে আরো দফায় দফায় ঋণ গ্রহণ করে সেলাই কাজের পাশাপাশি বিদেশী প্রজাতির শোভা বর্ধনকারী বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পালন করেন। পাখি বিক্রি থেকে তার মাসিক আয় হত ১২,০০০/- টাকা।
নাছিমা বেগম তার অবস্থার বেশ উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে বাড়ীতে স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ও বিশুদ্ধ পানির নলকূপ স্থাপন করেছেন। বাড়ীর ছাদে তিনি বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন এবং বাজারজাত করে বেশ সফলতা অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি তার স্বামীকে শাড়ী-কাপড়ের ব্যবসা করার জন্য একটি দোকান কিনে দিয়েছেন। নিজের এবং স্বামীর আয় দিয়ে তাদের সংসারে এখন স্বচ্ছলতা এসেছে। নিজের কর্মতৎপরতা, অধ্যাবসায়, চেষ্টা আর কঠোর অনুশীলনে তিনি সাফল্যের যে স্বাক্ষর রেখেছেন তা সত্যই অনুকরণীয়। বিআরডিবি’র সহযোগীতায় দারিদ্র্যতাকে জয় করে নাছিমা বেগম এখন বনায়ন, পরিবার পরিকল্পনা, গনশিক্ষা এবং বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহন করেছেন।
৪. আত্মনির্ভরশীল গোলাম মোস্তফার সফলতার গল্প
রাজশাহী জেলাধীন বাঘা উপজেলার কলাবাড়ীয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা পেশায় ছিলেন একজন দিনমজুর। স্ত্রী সন্তানসহ ৫ জনের সংসার তার একার আয়ে চালাতে গিয়ে তিনি চোখে অন্ধকার দেখতেন। তার নিজের চাষযোগ্য কোন জমি ছিল না। তিনি ১৯৯৫ সালের নভেম্বর মাসে বিআরডিবি’র পল্লী দারিদ্র্য সমবায় প্রকল্প (বর্তমানে আরএলপি) সমিতির সদস্য হন। ২৫ জনের সমিতিতে তিনি সমিতির ম্যানেজার নির্বাচিত হন। তার যোগ্য নেতৃত্বে সমিতির কার্যক্রম সফলভাবে এগিয়ে চলে। তিনি বিভিন্ন আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়নের উপর প্রশিক্ষণ নেন। সমিতির ঋণ গ্রহনের যোগ্যতা অর্জন করলে তিনি মুরগী পালনের জন্য ১ম বার ৪,০০০/- টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। প্রথম বছরেই তিনি ঋণ পরিশোধ করে ৩০০০/- টাকা লাভ করেন। এভাবে তিনি ১৮ বছরে ১,৭০,০০০/- টাকা ঋণ গ্রহণ করে তা যথানিয়মে পরিশোধ করেন। বর্তমানে তার খামারে ২,০৭৩ টি মুরগী আছে। তাছাড়া তিনি ২টি বিদেশী গাভী ক্রয় করেছেন। বর্তমানে তার মুরগীর খামার ও গাভীর দুধ বিক্রি করে মাসে আয় হয় প্রায় ২০,০০০/- টাকা। তার তিন ছেলে মেয়ে সবাই লেখা করছে। ২০০১,২০১০ এবং ২০১৩ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বাঘা ইউসিসিএলিঃ এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারনে বর্তমানে তিনি স্থানীয় মাদ্রাসার গর্ভনিং বডির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিআরডিবি’র সার্বিক সহযোগীতায় এখন তিনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুখী জীবনযাপন করছেন।
৫. এক সংগ্রামী নারী সাহানা
সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলা সদরের বাসিন্দ সাহানা বেগম।। দরিদ্র পরিবারের বেকার যুবক আঃ রশিদের সাথে তার বিয়ে হয়। খুবই আর্থিক কষ্টে তাদের দিন কাটে। ইতোমধ্যে সাহানার কোল জুড়ে আসে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। সংসারের খরচ বাড়লেও, আয় বাড়েনি। এমতাবস্থায় সামান্য কিছু দিয়ে হলেও স্বামীকে সাহায্য করতে চায় সাহানা। সাহানা ভাবে, আশাশুনি বাজারের উপর সাহানার স্বামীর একটা ভাঁঙ্গা দোকান আছে। কিছু নগদ টাকা হলে দোকানটি চালানো যায়। কিন্তু কে দেবে এই নগদ টাকা। ইতোমধ্যে সদাবিক প্রকল্পের মাঠ সহকারী নুরুন্নাহারের সাথে পরিচয় হয় সাহানার। নুরুন্নাহারের পরামর্শ মতে ২০০৫ সালে প্রতিবেশী ২০ জন বিত্তহীন মহিলাকে নিয়ে গঠন করেন “আশাশুনি দক্ষিণ পাড়া বিত্তহীন মহিলা দল”। তিনি ঐ দলের ম্যানেজার নিযুক্ত হন। ঐ বছর এই দলের মাধ্যমে বিআরডিবি’র সমন্বিত দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি হতে তিনি ১০,০০০/- ঋণ গ্রহণ করেন। ঐ টাকা দিয়ে দোকানটি মেরামত করে সামান্য মালামাল নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন সাহানা। এতে তার প্রতিদিন আয় হতো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ঘুরতে শুরু হয় সাহানার ভাগ্যের চাকা। ঋণের কিস্তি পরিশোধ এবং সংসারের টুকিটাকি খরচ করেও বছর শেষে তার পুজিঁ দাঁড়ালো ২৫,০০০/- টাকা। সাহানা এ পর্যন্ত সদাবিক প্রকল্প থেকে তিনবার ঋণ নিয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে গৃহীত ঋণের পরিমান ৩০,০০০/-টাকা। দলে তার নিজস্ব সঞ্চয় জমার পরিমান ৭,১০০/- টাকা।
দোকানদারির পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ের জন্য গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী পালন করেন সাহানা। বর্তমানে তাদের ২টি গরু, ৪টি ছাগল, ৫টি রাজহাঁস,৬ টি পাতিহাঁস,এবং ছোট বড় ২০টি মুরগী আছে। ঘরের পাশেই আছে একটি ছোট সবজি বাগান। স্বচ্ছল সংসারে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে জীবন কাটছে সাহানার । ছেলে-মেয়ে দুটি স্কুলে পড়ছে, ক্রমেই ব্যবসার প্রসার ঘটছে। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই বিআরডিবি’র নিকট কৃতজ্ঞ।
৬. সফল সমবায়ীর ফিরোজ মিয়ার সাফল্য কথা
মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলাধীন বৌলতলী ইউনিয়নভূক্ত নওপাড়া গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারে ফিরোজ আলম মিয়ার জন্ম। আর্থিক অস্বচ্ছলতার মধ্যেই ১৯৭৫ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। আর্থিক দৈন্যতার কারনে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে না পারায় তিনি ১৯৭৮ সালে নওপাড়া গ্রামে ২০ জন কৃষক নিয়ে “নওপাড়া কৃষক সমবায় সমিতি” গঠন করেন। অতঃপর তিনি বিআরডিবি হতে প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণোত্তর ঋণ নিয়ে কৃষিকাজে বিনিয়োগ করেন। বর্তমানে আবর্তক কৃষি তহবিল হতে ঋণ গ্রহণ করে তিনি কৃষি কাজের পাশাপাশি নিজ পুকুরে মাছ চাষ করছেন। বর্তমানে তার ৪ বিঘা কৃষি জমি ও ২ বিঘা মাছ চাষের একটি পুকুরসহ মূলধনের পরিমাণ ৮ লক্ষ টাকা আছে। মাছ চাষ ও কৃষিকাজ হতে তার বার্ষিক আয় প্রায় ৩,৫০,০০০/- টাকা। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তারা সকলে কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। তিনি এলাকার একজন সফল কৃষক ও মৎস্যজীবি হিসেবে পরিচিত। তিনি এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে বলিষ্ট অবদান রাখছেন। ফিরোজ মিয়া বর্তমানে একজন স্বচ্ছল সমবায়ী। তার এই সফলতার জন্য তিনি বিআরডিবি’র প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।
৭. পাহাড়ী কোমর তাঁতেই জুয়ামতিং বমের দিন বদল
বান্দরবান শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র পাহাড়ী প্রাকৃতির ঝর্ণা “শৈলপ্রতাপ”। এই প্রাকৃতিক ঝর্ণাকে ঘিরে আছে কয়েকটি পাহাড়ী জনপদ। যার একটি ফারুকপাড়া। শৈলপ্রপাত পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে ফারুকপাড়াসহ আশেপাশের জনগোষ্ঠী নিজস্ব ডিজাইনের বস্ত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহের উপায় খুঁজে পেয়েছে। শৈলপ্রপাতের আশেপাশে গড়ে উঠেছে পাহাড়ীদের নিজস্ব নজরকাড়া ডিজাইনের তৈরী করা বস্ত্রের দোকান।
ফারুকপাড়ার অধিবাসী খলখুপ বম এর সাথে ১৯৯০ সনে বিয়ে হয় দরিদ্র পরিবারের মেয়ে জুয়ামতিং বমের। স্বামীর আর্থিক অবস্থাও ভাল ছিল না। এদিকে নতুন মুখের আগমনের ফলে সংসার আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। জুয়ামতিং এর কিছু একটা করার ইচ্ছা থাকলেও পুঁজি বড় সমস্যা হয়ে দাড়াঁয়। বিআরডিবি’র সমিতির মাধ্যমে আর্থিক উন্নতির কথা লোক মুখে শুনে একদিন পাড়ার কয়েকজনকে নিয়ে বিআরডিবি অফিসে যান। বিআরডিবি বান্দরবান সদর উপজেলার কর্মকর্তাদের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাবর্ত্য চট্টগ্রম সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ২০০৩ সালে “ফারুকপাড়া সমাজ উন্নয়ন মহিলা দল” নামে একটি দল গঠন করেন। জুয়ামতিং দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প হতে মাত্র ৫% সার্ভিস ফি’তে ২,০০০/- টাকা ঋণ গ্রহন করেন। ঋণের টাকা দিয়ে বাজার থেকে উল কিনে পাহাড়ী কোমর তাতেঁর মাধ্যমে উলের চাদর, মাফলার, কম্বল,পাপোঁশ, টেবিল ম্যাট প্রভৃতি বানানো শুরু করেন। তৈরিকৃত বস্ত্রসমগ্রী পাইকারী দরে শৈলপ্রপাত এলাকার দোকানগুলোতে সরবরাহ করেন। প্রথম দিকে প্রতি মাসে ১,০০০/- টাকা আয় হতো। তিনি এ পর্যন্ত দশ দফায় ১,১৯,০০০/- টাকা ঋণ নিয়েছেন। তিনি এখন মাসে গড়ে ৮,০০০/- টাকা থেকে ১০,০০০/- টাকা আয় করেন। জুয়ামতিং বম কোমর তাতিঁর বোনা বস্ত্রসামগ্রী বিক্রয় করে আয়ের টাকা হতে ঋণ পরিশোধ ও সঞ্চয় জমার পাশাপাশি সন্তাদের লেখাপড়া ও স্বামীকে কৃষি কাজে সহযোগীতা করেছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে আমের বাগান করেছেন। তাদের বর্তমান আর্থিক অবস্থার জন্য বিআরডিবি’র অবদানের কথা সবসময় কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন।
৮. দেবলা রানীর সফলতার কাহিনী
সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের পূর্ব তেতুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র মহিলা দেবলা রানী ঘোষ, স্বামী অনিল মন্ডল। যার ২ শতক বসত ভিটার জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। কোন রকম দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছে। এহেন পরিস্থিতিতে দেবলা রাণী অতিরিক্ত আয়ের সন্ধান করতে থাকে। লোকমুখে তিনি বিআরডিবি’র “দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্পের” কথা জানতে পারেন। পরে প্রকল্পের কর্মকর্তার পরামর্শে ২০১৪ সালে ১৮ জন সদস্যের একটি দল গঠন করেন এবং প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী সকল সদস্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে দেবলা রানী প্রথম পর্যায়ে ১০,০০০/- টাকা ঋণ গ্রহন করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাকড়া চাষ শুরু করেন। কাকড়া চাষ ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় প্রথম বছর তার পরিবারের যাবতীয় খরচ বাদে বছরে ৪৮,০০০/- টাকা লাভ হয়। তিনি এই টাকা দ্বারা নিয়মিত সঞ্চয় ও কিস্তির টাকা পরিশোধ করে পুনরায় ২০১৫ সালে ১৫,০০০/- টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এই টাকা এবং পূর্বের লাভের টাকা দিয়ে কাকড়া চাষের আরও প্রসার ঘটান। বর্তমানে তার মাসিক আয় ৬০০০/- হতে ৭০০০/- টাকা এবং বছর শেষে মূলধন গঠন হয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকা। কাকড়া চাষে দেবলা রানীর সফলতা দেখে সমিতির অন্যান্য সদস্যরাও কাকড়া চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রকল্প থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন।
বর্তমানে দেবলা রানীর সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তিনি বাড়ীতে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ স্থাপন করেছেন। বাড়ীর চারপাশে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষ রোপন করেছেন। স্বামী সন্তানদের নিয়ে দেবলা রানী এখন সুখে শান্তিতে দিন যাপন করছেন। বিআরডিবি’র প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তার ফলে তার পরিবার আজ সুখী। তাই তিনি বিআরডিবি’র নিকট চিরকৃতজ্ঞ।